Pages

Sunday, 9 December 2018

পরিবেশের উপাদান ( For WB TET)





1. বায়ুমন্ডলঃ বায়ুমন্ডল বিভিন্ন বিভিন্ন ধরনের গ্যাস যেমন, SO2, CO2, O2, N2  ঈত্যাদি, জলীয় বাস্প, ধুলিকণা ইত্যাদি উপাদানগুলির সম্পন্বয়ে গঠিত। এর মধ্যে ৭৮.১% N2 এবং ২০.৯০%, আর্গন- ০.৯৩%, CO2- ০.০৩% ইত্যাদি।
রাসায়নিক গঠন অনুসারে বায়ুমন্ডলকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়।
সমমন্ডল(হোমোস্ফিয়ার)ও বিষম মন্ডল(হেটেরোস্ফিয়ার)
উচ্চতার সঙ্গে উষন্তার তারতম্য অনুসারে বায়ুমণ্ডলকে বিভিন্ন স্তরে বাগ করা হয়।
(i) ট্রপোস্ফিয়ারঃ ভূপৃষ্ঠের সবথেকে কছের স্তর এবং ১৫ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত।উচ্চতার সঙ্গে তাপমাত্রা ৬.৫   হ্রাস পায়। এই স্তরের উপরের অংশকে ট্রপপোজ বলে। এই অংশে ৭৫% বায়ু থাকে।এই স্তরে ঝড়, বৃষ্টি ইত্যাদি হয় বলে একে ক্ষুব্ধমণ্ডলও বলে।
(ii) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারঃএর উচ্চতা ১০-৫০ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত।এর আরেক নাম শান্তমন্ডল বলে।উচ্চতার সঙ্গে তাপমাত্রার পরিবর্তন হয় না।
(iii) মেসোস্ফিয়ারঃ স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার এর পরের স্তর।এই স্তরের উচ্চতা ৫০-৮০ কিমি। এই স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে তাপমাত্রা হ্রাস পায়।এই স্তরের উপরের সিমানাকে মেসোপজ বলে।
(iv) থার্মোস্ফিয়ারঃ মেসোপজ এর উপরের স্তরকে থার্মোস্তর বলে।উচ্চতার সঙ্গে তাপমাত্রা খুব তারাতারি বাড়ে। এই স্তর ৮০-১৩০ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত।
(v) এক্সোস্ফিয়ারঃ এই স্তর ৫০০-৬০০ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত।
ওজোনোস্ফিয়ারঃ এই স্তরটি ওজোন গাস নিয়ে গঠিত যা সূর্য থেকে আগত ক্ষতিকর রশ্নি গুলিকে শোষণ করে।
আয়োনোস্ফিয়ারঃ এই স্তরটি মেসোসিয়ার এর উপরের অংশ। এই স্তরে বেতার-তরঙ্গ প্রতিফলিত হয়।এই স্তরে মেরুজ্যোতি দেখা যায়। এই স্তরে হাইড্রোজেন, হিলিয়াম,প্রভৃতি গ্যাস আয়নিত অবস্থায় থাকে।
ম্যাগ্নেটোস্ফিয়ারঃ এই স্তরে প্রোটন এবং ইলেক্ট্রন থাকে।


2. শিলামন্ডল (Lithosphere): শিলার সমন্বয়ে গঠিত পৃথিবীর বহিরাবরণকে শিলামন্ডল বা অশ্মমন্ডল বলে। ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩০ কিমি গভীর পর্যন্ত শিলামন্ডলের ব্যাপ্তি।
শিলামন্ডলের নিচে পৃথিবীর কেন্দ্র পর্যন্ত দুটি বৃত্তাকার স্তর রয়েছে।
গুরুমন্ডলঃ ৩০ থেকে ২৯২৫ কিমি গভীর পর্যন্ত অংশকে গুরুমন্ডল বা ম্যান্টল বা ব্যারিস্ফিয়ার বলে।পৃথিবীর মোট আয়তনের ৮৩% ও ভরের ৬৭ % গুরুমন্ডলের অন্তরভুক্ত। এর নিম্নসীমাকে গুটেনবার্গ বিযুক্তি বলেরাসায়নিক ভাষায় গুরুমন্ডলকে নাইফ (NIFE) বলে। কারন এখানে নিকেল (Ni) ও লোহা(Fe) র প্রাধন্য বেশি। একে দুটি ভাগে ভাগ করা হয় –
(i) বহির্গুরুমন্ডলঃ এটি গুরুমন্ডলের উপরের প্রথম ৬৫০ কিমি অঞ্চল্কে বলে।
(ii) অন্তর্গুরুমন্ডলঃ এটি ৬৫০ কিমি থে ২৯২৫ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত।

কেন্দ্রমন্ডলঃ গুরুমন্ডলের নিচে ২৯২৫ কিমি থেকে ৬৪০০ কিমি পর্যন্ত অঞ্চলকে কেন্দ্রমন্ডল বা সেন্ট্রোস্ফিয়ার বলে।

শিলামন্ডল হল উদ্ভিদ ও জীবজগতের আবাসস্থল এবং বিভিন্ন খনিজ ও আকরিক সম্পদের উৎস ও আধার হিসাবে এর গুরুত্ব অপরিসীম।
শিলামন্ডলের প্রধান উপাদান গুলি হল
মৌলিক উপাদান(element)
সঙ্কেত(symbol)
percentage
অক্সিজেন
O
46.71
সিলিকন
Si
27.69
আয়ালুমিনিয়াম
Al
8.07
লৌহ
Fe
5.05
ক্যালসিয়াম
Ca
3.65
সোডিয়াম
Na
2.75
পটাসিয়াম
K
2.58
ম্যাগনেসিয়াম
Mg
2.08
অন্যান্য

1.42
Total

100

উৎপত্তি অনুসারে শিলাসমূহকে প্রধান তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়
(i) আগ্নেয় শিলা (Igneous): উত্তপ্ত আগ্নেয় পদার্থ শিতল হয়ে যে কঠিন আস্তরীভূত শিলা তৈরি হয় তাকে আগ্নেয় শিলা বলে। যেমন, ব্যাসাল্ট, গ্র্যানিট, ডায়োরাইট ইত্যাদি।
(ii) পাললিক শিলা (Metamorphic): শিলা ক্ষয় হয়ে পলিতে পরিনত হয় এবং পলি সঞ্চিত হয়ে কালক্রমে স্তরীভূত হয়ে যে শিলা গঠিত হয় তাকে পাললিক শিলা বলে। যেমন, বেলেপাথর, চুনাপাথর, কয়লা, ডলোমাইট ইত্যাদি। প্রানী ও উদ্ভিদের প্রস্তরীভূত মৃতদেহকে জীবাশ্ন বলে। পাললিক শিলায় জীবাশ্ন পাওয়া যায়।
(iii) রুপান্তরিত শিলা (Sedimentary): আগ্নেয় ও পাললিক শিলার গঠন ও বৈশিষ্ট্য প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে পরিবর্তিত হয়ে যে শিলা গঠিত হয় তাকে রূপান্তরিত শিলা বলে। যেমন,গ্র্যানিট নামক আগ্নেয় শিলা রুপান্তরিত হয়ে নিস এ পরিনত হয়েছে এবং বেলেপাথর এক ধরনের পাললিক শিলা রুপান্তরিত হয়ে কোয়ার্জাইট গঠন করে।  
স্তর অনুসারে শিলামন্ডলকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়।
(a) ভূ-ত্বক (Crust of the earth)(b) ক্ষুব্ধমন্ডল (substratum)
(a) ভূ-ত্বক (Crust of the earth): ভূ-ত্বক কঠিন শিলা ও বিভিন্ন পাত দিয়ে তৈরি। এই পাতগুলি ক্ষুব্ধমন্ডলের নমনীয় শিলার উপর ভাসমান অবস্থায় রয়েছে। ভূ-ত্বকের উপাদানের ভিত্তিতে দুভাগে ভাগ করা হয়।
(i) সিয়াল (Sial):  ভূ-ত্বকের সবচেয়ে উপররে স্তর সিলিকন(Si) ও আয়ালুমিনিয়াম (Al) নিয়ে গঠিত তাই এই শিলাস্তরকে সিয়াম বলে। এই স্তর ১৭ কিমি গভীর পর্যন্ত বিস্তৃত। গ্র্যানিট জাতীয় আগ্নেয় শিলা, নিস ও সিস্ট জাতীয় রুপান্তরিত শিলা ও বিভিন্ন পাললিক শিলা, যেমন বেলেপাথর ইত্যাদি সিয়াল এর প্রধান উপাদান। সিয়াল ও সিমার মধ্যবর্তী সীমান্তকে ‘কনরাড বিযুক্তি’ বলে
(ii) সিমা (Sima): ভূ-ত্বকের নিচের অংশকে সিমা বলে। এটি সিলিকন (Si) ও ম্যাগনেসিয়াম (Mg) নিয়ে গঠিত। সমুদ্রের নিচে ৫ কিমি থেকে ৭ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত। ব্যাসাল্ট জাতীয় ক্ষারীয় আগ্নেয়শিলা সিমার প্রধান উপাদান। সিমা ও ক্ষুব্ধমন্ডল এর মধ্যবর্তী সীমান্তকে ‘ মোহো বিযুক্তি’ বলে।
(b) ক্ষুব্ধমন্ডল (substratum): ভূ-ত্বক এর নিচের অংশ থেকে গুরুমন্ডলের উপরের অংশকে ক্ষুব্ধমন্ডল বলে।এখানে পৃথিবীর অভ্যন্তরের চাপ ও তাপের তারতম্যের ফলে এখানে নমনীয় শিলা গলিত ম্যাগমা সৃষ্টি করেছে। অগ্ন্যুৎপাতের সময় এই গলিত ম্যাগমা লাভা হয়ে ভূপৃষ্ঠে বেরিয়ে আসে।
মাটি বা মৃত্তিকাঃ ভূপৃষ্টের উপরে খনিগ ও জৈব পদার্থের দ্বারা গঠীত বিভিন্ন স্তরযুক্ত প্রাকৃতিক বসস্তকে মাটি বা সয়েল বলে। লাতিন শব্দ ‘সোলুম বা সোলাম’ থেকে সয়েল কথাটি এসেছে।
মাটি প্রধানত চারটি উপাদানে গঠিত। যেমন (i) খনিজ উপাদান (ii) বায়ু (iii) জল (iv) জৈব পদার্থ
আদর্শ অবস্থায় ভূ-পৃষ্ঠের উপরে মাটি স্তরে স্তরে সজ্জিত থাকে, মাটির প্রতিটি স্তরকে হোরাইজন বলে।
3. বারিমন্ডল (Hydrosphere): শিলামন্ডলের যে সমস্ত নিচু অংশ জলে পরিপুর্ণ হয়ে সাগর, মহাসাগর, হ্রদ, নদী, জলাশয় ইত্যাদি জল্ভাগ গরে তুলেছে, সেই জলমগ্ন অঞ্চল্গুলিকে একত্রে বারিমন্ডল বলে। গ্রিক শব্দ hydro  অর্থাৎ জল থেকে এসেছে হাইড্রোস্ফিয়ার।
পৃথিবীর সমস্ত জলের মধ্যে ৯৭.৫% হল লবাণাক্ত জল এবং ২.৫% হল মিষ্টি জল। এর মধ্যে ৬৮.৯% হল বরফ। সুতারাং পৃথিবীর সমস্ত জলের ০.৩% মিষ্টি জল জেটা ব্যবহার যোগ্য।
পৃথিবীর মোট ভরের (১.৪*১০১৮ টন) ০.০২৩% অর্থাৎ ২০*১০১২ টন জলপৃথিবীর চার ভাগের তিন ভাগ সমুদ্র এবং সমুদ্র জলে লবণাক্তের পরিমান ৩.৫% অর্থাৎ এক কেজি জলে ৩৫ গ্রাম লবণ।
জলের প্রধান উপাদান হল H2O বা হাইড্রোজেন অক্সাইড। এছাড়া লবণাক্ত জলে যেসব লবন উপাদান থাকে তা হল
লবণ
সংকেত
১০০০গ্রাম জলে লবণের পরিমান
সোডিয়াম ক্লোরাইড
NaCl
23
ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড
MgCl2
5
সোডিয়াম সালফেট
Na2SO4
4
ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড
CaCl2
1
পটাশিয়াম ক্লোরাইড
KCl
1
অন্যান্য

1
Total

35

4. জীবমন্ডল (Biosphere): উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের সমষ্টিকে জীবমন্ডল বলে। এটি জীব ও জীবনের ধারক ও বাহক।জীবমন্ডল একটি সামগ্রিক এলাকা এবং পৃথিবীর জল, মাটি, বাতাস – যেখানেই প্রাণের অস্তিত্ব আছে, তা জীবমন্ডলের অন্তর্ভুক্ত। জীবমন্ডলের বিস্তৃতি মাটির গভীরে প্রায় ১০ মিটার, সমুদ্রের গভীরে ১০০ মিটার ও বায়ুমন্ডলে ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩০০ মিটার।
বৈশিষ্ট্য অনুসারে জীবমণ্ডলকে দুভাগে ভাগ করা হয়।
(a) স্থলভাগের জীবমন্ডল (Pedobiosphere): স্থলভাগের জীবমন্ডলে রয়েছে স্থলজ উদ্ভিদ, প্রাণী ও মানুষ।
(b) জল ভাগের জীবমন্ডলে আছে জলজ উদ্ভিদ ও বিভিন ধরনের জলজ প্রাণী।
5. জলচক্র (Hydrological Cycle): যে প্রাকৃতিক শক্তির বশে জল তার বিভিন্ন অবস্থায়, শিলামন্ডল, বারিমন্ডল ও আবহ মন্ডলের মধ্যে ক্রমাগত অপ্রতিহত অবস্তায় আবর্তিত হয়ে চলেছে, জলের সে চক্রাকার আদান-প্রদান ব্যবস্থাকে জলচক্র বা বারিচক্র বলে।
জলচক্র হল পরিবেশের মধ্যে জলের এক বিরামহীন, বিঘ্নহীন আবর্তন ব্যবস্থা, যার সাহায্যে জল কখনও বাস্প, কখনও জলবিন্দু বা কখনও বৃষ্টির জল হয়ে পরিবেশের মধ্যে নিরন্তর ঘুরে চলেছে।
জলচক্রের তিনটি প্রধান অংশ-
(ক) বাস্পীভবন (evaporation) (খ) ঘনীভবন (Condensation) ও (গ) অধঃক্ষেপন বা বর্ষন (Precipation)
গুরত্বঃ (i) প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য জলচক্রের গুরুত্ব অপরিসীম, এর সাহায্যে অশ্নমন্ডল, বারিমন্ডল, বায়ুমন্ডল ও জীবমন্ডলের মধ্যে সংযোগ স্থাপিত হয়
(ii) যেহেতু পৃথিবীর সব জায়গায় সমপরিমাণ জল নেই তাই জলচক্র পরিবেশের মধ্যে জলের বন্টনগত ভারসাম্য বজায় রাখে।
(iii) জলচক্র ও জলচক্রের সাহায্যে বিভিন্ন প্রাকৃতিক ক্ষয়কারী প্রক্রিয়া ও জীব ভূ-রাসায়নিক চক্র কাজ করতে পারে যার ফলে মানুষের পক্ষে কৃষিকাজ, শিল্পোৎপাদন ইত্যাদি করা সম্ভব।



No comments:

Post a Comment