সংজ্ঞাঃ
ব্যুৎপত্তিগতভাবে ‘পরিবেশ’ শব্দটির উৎপত্তি ফরাসি শব্দ ‘Environ’ থেকে যার ‘en’ এর in অর্থাৎ মধ্যে, এবং ‘viron’ অর্থে circuit অর্থাৎ ‘পরিবেষ্টন’।
* The new
International Webster’s Comprehensive Dictionary এর মতে ‘পরিবেশ
হল বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীন অবস্থানসমূহের সমষ্টি, যা জীবকুলের অস্তিত্ব বৃদ্ধি ও
কল্যাণকে প্রভাবিত করে।
* United Nation
Environment Program (1976) এর মতে ‘পরিবেশ বলতে পরস্পর ক্রীয়াশীল
উপাদানগুলির মাধ্যমে গড়ে ওঠা সেই প্রাকৃতিক ও জীবমন্ডলীয় প্রণালীকে বোঝায় যার
মধ্যে মানুষ ও অন্যান্য সজীব উপাদানগুলি বেঁচে থাকে, বসবাস করে’।
* পরিবেশবিদ C.C
Park এর মতে ‘নির্দিষ্ট স্থানে ও কালে মানুষের চারপাশের
অবস্থাসমূহের সামাজিকতাকে পরিবেশ বলে’।
* বটকিন ও কেলার ১৯৯৫ সালে তাদের ‘ Environmental Science’ নামক গ্রন্থে বলেছেন যে ‘ জীব উদ্ভিদ বা প্রানী
তাদের জিবঞ্চক্রের যে কোন সময়ে যে সমস্ত জৈব এবং অজৈব কারনগুলির দ্বারা প্রভাবিত
হয় , সেই কারন গুলির সমষ্টিকে পরিবেষ বলে।
পরিবেশবিদ Bunfo (1756) তার ‘Natural History’ গ্রন্থে মানুষ, পশুপাখি ও উদ্ভিদের মধ্যে সম্পর্কে প্রমান করতে সচেষ্ট
হয়েছেন।
বিভিন্ন পরিবেশবিদ্দের মত অনুসারে পরিবেশবিদ্যার সংজ্ঞা হল।
বিজ্ঞানের যে শাখায় সমগ্র জীবকুল ও জীবাণুদের মধ্যে
পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপন করে পরিবেশের বিভিন্ন জড় উপাদান, জৈব ও অজৈব উপাদানগুলির
সুসম্পর্ক আলোচনা এবং পরিবেশের নানান সমস্যা ও তার সমাধানের চেষ্টা করা হয়, তাকে
পরিবেশবিদ্যা বলে।
পরিবেশবিদ্যার সুযোগ (Scope
of Environmental Studies):
১. পৃথিবীর
উৎপত্তি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা।
২. বাস্তুতন্ত্র বা ইকোসিস্টেম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন
করা।
৩. প্রকৃতিতে উদ্ভিদ, প্রানী ও অনুজীবসমূহের প্রতিনিয়ত যে
পরিবর্তন ও বিভাজন ঘটছে সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য সরবরাহ করা।
৪. প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার এবং পরিবেশ দুষন বিষয়ে
মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
৫. পরিবেশ বিষয়ক আইন, নিয়ম ও অধিকার সম্পর্কে মানুষকে সচেতন
করা।
৬. প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ, দুর্ঘটনা, বিপর্যয়,
দূষন ও তার কুফল সম্বন্ধে মানুষের জ্ঞান বৃদ্ধি করা এবং নিয়ন্ত্রনের উপায় নির্ধারন
করা।
৭. মানবদেহের গঠন এবং মানুষের বিভিন্ন অসুখ এর কারন ও তার
প্রতিকার সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা।
পরিবেশবিদ্যার গুরুত্ব (Importance
of Environmental Studies):
১. বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে শক্তির প্রবাহ, পুষ্টির যোগেন এবং
জীবজগতের মধ্যে পুষ্টির যোগান অনুযায়ী ঐ বাস্তুতন্ত্রের
প্রজাতির সংখ্যা কতটা সামঞ্জস্যপূর্ন তা বিচার বিশ্লেষন
করা।
২. পরিবেশবিদ্যার মাধ্যমে পৃথিবীর জনসংখ্যা বন্টন,
বৈশিষ্ট্য এবং পরিবেশের সঙ্গে মানুষের অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রগতির হার যথার্থ
কিনা সে সম্পর্কে ধারনা করা যায়।
৩. প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলিকে সঠিকভাবে মোকাবিলার জন্য
বিভিন্ন নিয়ন্ত্রন পদ্ধতিগুলির ব্যবহার করতে শেখা।
৪. প্রাকৃতিক সম্পদগুলিকে সঠিক বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে ব্যবহার
করতে শেখা।
৫. পরিবেশবিদ্যা জনসাধারনের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি
করা।
৬. পরিবেশ দুষনের মনুষ্যসৃষ্ট কারনগুলিকে সনাক্ত করে তাদের
যথেষ্ট হ্রাস করার প্রচেষ্টা করা।
৭. শিল্প, বাণিজ্য এবং কৃষির প্রসারের সাথে সাথে মানুষের
অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান সংক্রান্ত চাহিদাগুলির পরিবর্তন এবং সংস্থাপন সম্পর্কে
সম্যক ধারনা লাভ করা।
৮. পরিবেশের বিভিন্ন জৈবরাসায়নিক চক্রগুলি সম্পর্কে ধারনা
লাভ করা।
৯. বর্তমান এই পৃথিবির পরিবেশকে ভভিষ্যতের প্রতিটি শিশুর
বাসযোগ্য করার জন্য দুষনমুক্ত পরিবেশ বিষয়ে পাঠ নেওয়া প্রয়োজন।
পরিবেশ শিক্ষার লক্ষ্য (Goals
of Environmental Education):
১. পরিবেশ সংক্রান্ত গণসচেতনতা বৃদ্ধি করা।
২. অবাঞ্ছিত ক্রিয়াকলাপ ব্যতিরেকে বিজ্ঞানভিত্তিক
সুপরিকল্পনা গ্রহন করা।
৩. উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকল্পগুলিকে পরিবেশ বান্ধব (Eco-friendly) মুখী করে তোলা।
৪. রাজনৈতিক স্তরে দলমত নির্বিশেষে রক্ষার ক্ষেত্রটিকে
যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া।
৫. প্রাকৃতিক সম্পদের বিজ্ঞানসম্মত ব্যবহার ও সংরক্ষণের
মাধ্যমে মানুষকে তার নিজের এবং আগামী প্রজন্মের স্বার্থে পরিবেশ সঠিকভাবে জানতে
সাহায্য করা।
৬. লুপ্তপ্রায় এবং বিরল জীব প্রজাতিগুলিকে সঠিক পদ্ধতিতে
সংরক্ষণ করা।
পরিবেশের প্রকারভেদঃ পরিবেশকে প্রধান দু ভাগে ভাগ করা হয়।
A) প্রাকৃতিক পরিবেশঃ প্রকৃতির সৃষ্ট সজীব
এবং জড় উপাদানের সমন্বয়ে যে পরিমণ্ডল গড়ে উঠে তাকে প্রাকৃতিক পরিবেশ বলে।
একে আবার চার ভাগে ভাগ করা হয়। (i) সামুদ্রিক পরিবেশ (Marine
Environment) (ii) মোহনার পরিবেশ (Estuarine Environment)
(iii) স্বচ্ছ জলের পরিবেশ (Fresh Water Environment) (iv) স্থলজ পরিবেশ (Terrestrial Environment)
B) সামাজিক পরিবেশঃ সমাজের বিভিন্ন বিভাগ বা
গোষ্ঠি এবং প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সুষম আত্মঃক্রিয়ার মাধ্যমে যে পরিবেশ গড়ে উঠে তাকে
সামাজিক পরিবেশ বলে।
পরিবেশের উপাদানঃ পরিবেশের উপাদানগুলি দুধরণের
a) সজীব উপাদানঃ জীবাণু, উদ্ভিদ, মানুষ
b) জড় উপাদানঃ জল, বায়ু, মাটি, আলো, উষ্ণতা,
ভৌত উপাদান ও রাসায়নিক উপাদান।
0 comments:
Post a Comment