১. কোন শব্দ উচ্চারন করা মাত্রই যে ছবিটি আমাদের মনের মধ্যে
ফুটে ওঠে তাই হল এর মূল অর্থ। একেই বলা হয় মুখ্যার্থ বা বাচ্যার্থ। আমরা একে
আক্ষরিক ভাবে অর্থ ও বলি। ইংরেজীতে একে আমরা বলি literal meaning. ‘মাথা’ বললে শরীরে
উর্ধাংশে স্তিত যে অবয়বটির ছবি আমাদের মনের মধ্যে ফুটে তাই হল এর বাচ্যার্থ।
২. কিন্তু যদি বলি লোকটি ‘গ্রামের মাথা’ তখননি আমরা
লক্ষ্যার্থে পৌঁছাব।
৩. আবার যখন বলব ওর অঙ্কে মাথা নেই লক্ষ্যার্থকে ছাপিয়ে তা
হয়ে উটবে ব্যঙ্গার্থে বা সাংকেতিক অর্থে।
৪. অর্থ পরিবর্তনের ধারাঃ
i) অর্থের বিস্তার বা প্রসারঃ অর্থের পরিধি
যদি বেড়ে যায় তা হলে তাকে আমরা বলি অর্থের বিস্তার বা প্রসার।
যেমন, মার্গ
মৃগ চলার পথে >
যে কোন পথ।
ii) অর্থের সংকোচঃ অর্থ বিস্তারের ঠিক উলটোটা
হল অর্থ সংকোচ। অর্থাৎ অর্থের বড় পরিধিটা ছোট করে আনা।
যেমন, অন্ন
খাদ্য > ভাত
iii) অর্থের উৎকর্ষ বা উন্নতিঃ অর্থের উৎকর্ষ
বা উন্নতি বলতে আমরা বুঝি যে অর্থ মন্দ বা সাধারন ছিল তা উত্তম বা উচ্চভাবের অর্থ
প্রকাশ করছে।
যেমন, মন্দির
গৃহ > দেবালয়।
অর্থের অপকর্ষ বা অবনতিঃ বিপরীত ক্রমে অর্থের অপকর্ষ বলতে
আমরা বুঝি যে ছিল সম্ভ্রম্বাচক বা উচ্চভাববাচক তা হয়ে উটল তুচ্ছার্থক ।
যেমন, ইতর
অপর > ইতর (নীচ)
অর্থ সংশ্লেষ বা অর্থ সংক্রমঃ এছাড়া এমন হতে পারে মূল
অর্থটা কিছুটা বজায় থেকেও অন্ন অর্থ এসেছে তাতে। একে আমরা বলি অর্থ সংশ্লেষ বা
অর্থ সংক্রম।
যেমন, ‘ঘর্ম’ মানে গ্রীষ্ম আর তা থেকে অর্থ দাড়াল গ্রীষ্ম
জনিত বাদস্রুতি – ঘাম।
রূপান্তরঃ অর্থের সম্পুর্ন রুপান্তর ঘটতে পারে।
যেমন, ‘অভিসম্পাত’ এর মূল অর্থ যুদ্ধের জন্য পরস্পরের মুখো
মুখি হওয়া তা এখন অভিশাপ অর্থে চলে।
৫. অর্থ পরিবরতনের কারনঃ
i) ব্যাঙ্গ বিদ্রুপে আমরা অর্থ বদলে দিই ।
যেমন, অধার্মিক বা পাপী বোঝাতে ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির।
ii) মঞ্জুভাষনে বা অপ্রিয়তা নিবারনেও শব্দের
অর্থের পরিবর্তন ঘটে। যেমন, ঘুষ হয়ে ওঠে ‘জলপানি’, সেলামী বা পাগড়ি।
সংস্কারের ফলে নেই হয়ে ওঠে ‘বাড়ন্ত’।
iii) বাংলা বাঘবিধিতেও শব্দার্থের অর্থ
পরিবর্তনের নানা ধারা লক্ষ্যনীয়। যেমন, তুলসীতলা হয়ে ওঠে ‘ভাশুর ঠাকুরতলা’
iv) সামাজিক প্রথাও শব্দার্থের পরিবর্তন
ঘটায়। ফলে ‘সতি’ হয়ে ওঠে ‘পতির চিতায় উৎসর্গিতা’।
v) বাড়িয়ে বলার প্রবানতাও নতুন শব্দ বা অর্থ
পায়।
যেমন, ‘ভীষণ’ মানে ভয়াবহ কিন্তু ‘ভীষন খুশি’, ‘ভীষণ ভাল’ না
বলে আমাদের তৃপ্তি নেই।
vi) শৈথিল্য ও আরামপ্রিয়তা অর্থেও শব্দের
পরিবর্তন ঘটে। যেমন ‘সন্ধ্যা দেওয়া’ কথাটি ব্যবহার করা হয় সন্ধ্যের সময় প্রদীপ
দেওয়া অর্থে।
vii) আলঙ্কারিক প্রয়োগ কালক্রমে অর্থের
পরিবর্তন ঘটে। যেমন, ‘মিথ্যা কথা বলা অর্থে ‘গুলমারা’।
0 comments:
Post a Comment